Thursday, October 23, 2014

রক্ত


ইংরেজি: Blood
 
স্বাভাবিক রক্তের উপাদান
Parameter Value
Hematocrit 45 ± 7 (38–52%) for males
42 ± 5 (37–47%) for females
pH 7.35–7.45
base excess −3 to +3
PO2 10–13 kPa (80–100 mm Hg)
PCO2 4.8–5.8 kPa (35–45 mm Hg)
HCO3 21–27 mM
Oxygen saturation Oxygenated: 98–99%
Deoxygenated: 75%

রক্ত এক প্রকার তরল যোজক কলা (Connective Tissue) এটি উৎপন্ন হয় ভ্রূণীয় মেসোডার্ম স্তর থেকে। রক্ত লাল বর্ণের হয়ে থাকে। 'হিমোগ্লোবিন' নামক রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতির কারণে রক্তকে লাল দেখায়। রক্তবাহিকার মাধ্যমে রক্ত সমগ্র দেহে সঞ্চালিত হয়।


রক্তের
pH গড়ে 7.36-7.45। এই pH-এর মাত্রা থেকেই বোঝা যায় যে, রক্ত কিছুটা ক্ষারীয়। এছাড়াও কিছু অজৈব লবণের উপস্থিতির কারণে রক্তের স্বাদ লবণাক্ত। রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব প্রায় 1.065, যা পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব অপেক্ষা বেশি। রক্তের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৬-৩৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে, যা তার মোট ওজনের প্রায় ৮%।

রক্তের কাজ:

  • লোহিত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিন ও প্লাজমার মাধ্যমে ফুসফুস থেকে কলায় পরিবহন করে।
  • অন্তঃশ্বসনের ফলে সৃষ্ট কলাকোষ হতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে বহন করে নিয়ে যায়।
  • দেহের উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন পরিবহন করে।
  • তঞ্চনের মাধ্যমে ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রনে আনে।
  • ফাইটোব্লাস্ট তৈরি করে কলার ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • অন্ত্র থেকে পরিপাককৃত খাদ্যসার সমগ্র দেহে পরিবহন করে।

রক্তের উপাদান:
টেস্টটিউবে রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্রে প্রতি মিনিটে ৩০বার ৩০০০বার করে ঘোরানো হলে রক্তকে দুইটি স্তরে বিভক্ত হতে দেখা যায়। এই স্তরের উপাদানের ভিত্তিতে রক্তেকে দুটি ভাগ ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হলো
     ১. রক্তরস
(Plasma)
     ২. রক্তকণিকা
(Corpuscle)
১. রক্তরস (Plasma)
রক্তকে সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্রে নিয়ে ঘোরানোর পর উপরে যে ভাসমান হালকা হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ দেখা যায় তার প্রায় ৫৫% হলো রক্তরস। এর প্রায় ৯০-৯২%-ই পানি। বাকি ৮-১০% হল দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ। দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের মধ্যে আছে প্রায় জৈব লবণ ৭-৮% এবং অজৈব লবণ আছে প্রায় ০.৯%। এতে কিছু গ্যাসও পাওয়া যায়। গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে নাইট্রিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রক্তের জৈব পদার্থে আমিষজাতীয়, নাইট্রোজেনঘটিত ও অন্যান্য বহু জৈব বস্ত দেখা যায়। আমিষজাতীয় পদার্থের মধ্যে ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, সিরাম অ্যালবুমিন প্রভৃতি পদার্থ দেখা যায়। নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থের মধ্যে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন, অ্যামোনিয়া, জ্যানথিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রক্তরসের জৈব অংশে কোলেস্টেরল, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন, বিলিরুবিন, বিভিন্ন এনজাইম, গ্লুকোজ, লেসিথিন থাকে। আর অজৈব উপাদানের মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম
(Na), পটাসিয়াম (K), ক্লোরিন (Cl), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), লোহা (Fe), তামা (Cu), ফসফরাস (P) ইত্যাদি। রক্তরসে প্রতিরক্ষার জন্য অ্যান্টিটক্সিন, অ্যাগ্লুটিনিন থাকে।
২. রক্তকণিকা (Corpuscle)
রক্তকে সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্রে নেয়ার পর প্রাপ্ত রক্তরসের নিচে গাঢ় যে অংশ দেখা যায় তার প্রায় ৪৫% হল রক্তকণিকা। রক্তকণিকা তিন ধরনের। যথা

        ১. লোহিত রক্তকণিকা
        ২. শ্বেত রক্তকণিকা
        ২. অনুচক্রিকা
১. লোহিত রক্তকণিকা (Red blood cell)
ইংরেজি: Erythrocyte [ গ্রিক শব্দ erythros (লোহিত)+kytos (কোষ)]

লোহিত রক্তকণিকা হলো নিউক্লিয়াসবিহীন চাকতি আকারের লাল রঙের কোষ। মানুষের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা দেখতে অনেকটা গোলাকার বা ক্ষুদ্র দ্বিঅবতল, স্থিতিস্থাপক, এগুলোর কিনারা মসৃণ ও পুরু। এই লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন আসলে সূর্যের ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের যেমন, লাল বা সবুজ আলোকরশ্মি অত্যাধিক শোষণ করে থাকে তাই এগুলো লাল দেখায়। রক্তে লোহিত রক্তকণিকার উপস্থিতি বেশি হওয়ায় রক্ত লাল হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতি ১০০ মি.লি. রক্তে প্রায় ১৫ গ্রাম হিমোগ্লোবিন পাওয়া যায়। লোহিত রক্তকণিকার গড় ব্যাস প্রায় ৭.৩µ ও গড় স্থূলতা প্রায় ২.২µ।
লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন। ভ্রূণাবস্থায় এগুলো প্লীহা, যকৃত, থাইমাস থেকে উৎপন্ন হয়। মানবজীবনের প্রথম ২০ বছর পর্যন্ত লোহিত রক্তকণিকা দেহের প্রায় সকল লম্বা অস্থির অস্থিমজ্জার হিমোসাইটোব্লাস্ট থেকে উৎপন্ন হয়। পরবর্তীতে হিউমেরাস, স্টার্ণাম, পর্শুকা, কশেরুকা, ফিমার ইত্যাদি অস্থির শেষপ্রান্ত হতে এগুলো উৎপন্ন হতে দেখা যায়।

লোহিত রক্তকণিকার কাজ: এতে উপস্থিত হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে দেহকোষে বেশিরভাগ অক্সিজেন ও সামান্য কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে।

  • রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপন্ন করে।
  • রক্তের সান্দ্রতা রক্ষা করে।
  • হিমোগ্লোবিন ও অন্বযন্ব অন্ত:কোষীয় বস্তু বাফার হিসেবে রক্তের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
১. শ্বেত রক্তকণিকা (White blood cell)
ইংরেজি : Leucocyte [গ্রীক শব্দ, Leucos (বর্ণহীন)+ kytos (কোষ)]

মানুষের শ্বেত রক্তকণিকা আকারবিহীন। এগুলো হিমোগ্লোবিনবিহীন নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ। প্রয়োজন অনুসারে আকার বদলে এরা গোলাকার, ডিম্বাকার, অশ্বক্ষুরাকৃতির হতে পারে। এরা লোহিত রক্তকণিকা অপেক্ষা আকারে বড়। এদের গড় ব্যাস ৭.৫-২০µ। শ্বেত রক্তকণিকা ও লোহিত রক্তকণিকা অনুপাত ১:৭০০। মানবদেহে প্রতি ঘন মি.লি. রক্তে প্রায় ৫০০০-৮০০০ শ্বেত রক্তকণিকা দেখা যায়। শিশুদের শ্বেত রক্তকণিকা বেশী। অসুস্থ অবস্থায় শ্বেতরক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। শ্বেত রক্তকণিকায় লিপিড, কোলেস্টেরল, গ্লাইকোজেন পাওয়া যায়।

আকৃতি ও গঠনভেদে শ্বেত রক্তকণিকা দুই ধরনের। যথা

 
১. অ্যাগ্র্যানুলোসাইট: এগুলো দানাহীন, বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত। এগুলো লসিকা, প্লীহা, থাইমাস থেকে উৎপন্ন হয়। এগুলোকে আকৃতিভেদে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- লিম্ফোসাইট ও মনোসাইট।

লিম্ফোসাইটগুলো আকারে ছোট, তবে ক্ষারাসক্ত সাইটোপ্লাজমের পাতলা স্তরে আবৃত। এগুলোতে বড় নিউক্লিয়াস আছে। এরা কৈশিক নালিকা থেকে যোজক কলায় বিস্তৃত। মনোসাইটগুলোতে বিপুল পরিমাণ সাইটোপ্লাজম দেখা যায়। এগুলোর নিউক্লিয়াস বৃক্কাকার বা ডিম্বাকার হয়ে থাকে।

২. গ্র্যানুলোসাইট: এগুলো দানাদার ও ২-৭ খণ্ডযুক্ত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান। দানাগুলো লিশম্যান রঞ্জকে রঞ্জিত হয়। বর্ণধারনের উপর নির্ভর করে এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

  • নিউট্রোফিল, যা বর্ণ নিরপেক্ষ দানাদার সাইটোপ্লাজমযুক্ত।
  • ইওসিনোফিল, এদের দানাগুলো ইওসিন রঞ্জক দ্বারা লাল রঙে রঞ্জিত।
  • বেসোফিল, এদের দানাগুলো নীল বর্ণের ও ক্ষারাসক্ত।
শ্বেত রক্তকণিকার কাজ
  • মনোসাইট ও নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে।
  • দানাদার লিউকোসাইট হিস্টামিন তৈরি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • নিউট্রোফিলের বিযাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।
  • অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে দেহের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • ইওসোনোফিল রক্তে প্রবেশকৃত কৃমির লার্ভা এবং অ্যালার্জিক অ্যান্টিবডি ধ্বংস করে।
৩. অণুচক্রিকা (Platelets বা Thrombocytes)

অণুচক্রিকা হল সবচেয়ে ছোট আকৃতির রক্তকণিকা। এটি দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার, দণ্ডাকার হতে পারে। এগুলোর সাইটোপ্লাজম দানাময়, গহ্বরযুক্ত, একক ঝিললীতে আবৃত ও নিউক্লিয়াসবিহীন। এতে প্রচুর পরিমাণে সেফালিন নামক ফসফোলিপিড থাকে। অণুচক্রিকার ব্যাস প্রায় ৩µ। তবে এর চেয়ে বড় আকারের অণুচক্রিকাও দেখা যায়। এগুলোর ব্যাস প্রায় ৪-৫µ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতি ঘন মি.লি. রক্তে প্রায় আড়াইলক্ষ হতে পাঁচ লক্ষ। অণুচক্রিকার উৎপত্তি সম্পর্কে মতানৈক্য আছে। অনেকে বলেন যে, অণুচক্রিকা শ্বেত রক্তকণিকা থেকে উৎপন্ন হয়। অণুচক্রিকার গড় আয়ু প্রায় ৫-১০ দিন। অণুচক্রিকার আয়ু শেষ হলে প্লীহা ও অন্যান্য রেটিকুলো এন্ডোথেলিয়াল কোষে নষ্ট হয়।

অণুচক্রিকার কাজ:

  • ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চন ঘটায়।
  • রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হলে এন্ডোথেলিয়াল আবরণ পুনর্গঠন করে।
  • ফ্যাগোটোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ভাইরাস, কার্বন কণা ভক্ষণ করে।
  • সেরাটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে, যা রক্তনালীকে সংকুচিত করে রক্তপাত হ্রাস করে।
  • হিমোস্ট্যাটিক প্লাগ গঠন করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।

সূত্র : উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তক সমূহ এবং ইংরেজি উইকিপেডিয়া।

 

No comments:

Post a Comment

পোস্ট সম্পর্কে মতামত দিন