তাপঃ
তাপ একপ্রকার শক্তি যা উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে তাপমাত্রার পার্থক্যজনিত কারণে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যেমন- পরিবহণ, পরিচলন, বিকিরণ প্রক্রিয়ায় গমন করে।
অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ ভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল তাপ ক্যালরিক নামে
এক প্রকার অতি সূক্ষ্ম তরল বা বায়বীয় পদার্থ। গরম বস্তুতে ক্যালরিক বেশি
থাকে এবং শীতল বস্তুতে তা কম থাকে। কোন বস্তুতে ক্যালরিক প্রবেশ করলে তা
গরম হয় আর চলে গেলে তা শীতল হয়।কিন্তু ১৭৭৮ সালে কাউন্ট রামফোর্ড প্রমাণ করেন ক্যালরিক বলে বাস্তবে কিছু নেই। তাপের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অাছে গতির। তিনি কামানের নল তৈরির সময় ধাতুর টুকরাকে ড্রিলমেশিন দিয়ে ফুটো করার সময় লক্ষ করেন যে, ছোট্ট ধাতুর টুকরো ছিটকে আসছিল সেগুলো অত্যন্ত উত্তপ্ত। তিনি চিন্তা করেন, ড্রিল চালাতে যে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় হয়েছে তার থেকেই তাপ উদ্ভব হয়। এই যান্ত্রিক শক্তিই ধাতব টুকরাগুলোর অণুগুলোতে গতিশক্তির সঞ্চার করে টুকরাগুলোকে উত্তপ্ত করে।
তাপ যেভাবে উৎপন্ন হয়ঃ
প্রকৃতপক্ষে, তাপ পদার্থের অণুগুলোর এলোমেলো গতির ফল। পদার্থের
অণুগুলো সবসময় গতিশীল অবস্থায় থাকে। কোন পদার্থের মোট তাপের পরিমাণ এর
মধ্যস্থিত অণুগুলোর মোট গতিশক্তির সমাণুপাতিক। কোন বস্তুতে তাপ প্রদান করা
হলে এর অণুগুলোর ছুটাছুটি বৃদ্ধি পায়, ফলে এর গতিশক্তিও বেড়ে যায়।
সুতরাং তাপ পদার্থের আণবিক গতির সাথে সম্পর্কিত এক প্রকার শক্তি যা ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি জন্মায়।
শক্তি হিসেবে তাপঃ
তাপ এক প্রকার শক্তি কারণ তাপ কাজ সম্পাদন করতে পারে। তাপ অন্য রকম শক্তি
থেকে পাওয়া যায়, আবার তাপকে অন্য শক্তিতেও রূপান্তরিত করা যায়।
যেমন-পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানি তেল দহনের ফলে রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে
রূপান্তরিত হয়। আবার এ তাপ শক্তি বয়লারের পানিকে বাষ্পে রূপান্তরিত করে।
এক্ষেত্রে, তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
তাপের এককঃ
আমরা জানি, তাপ এক প্রকার শক্তি সুতরাং তাপ পরিমাপের একক হবে শক্তির একক অর্থাৎ জুল (J). এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি শুরু হওয়ার পূর্বে তাপ পরিমাপের একক হিসেবে ক্যালরি (cal) সর্বাধিক প্রচালিত ছিল। উল্লেখ্য যে, 1 ক্যালরি= 4.1858 জুল।
তাপমাত্রাঃ
তাপমাত্রা বা উষ্ণতা হচ্ছে কোন বস্তু কতটা গরম (উষ্ণ) বা ঠাণ্ডা (শীতল) তার পরিমাপ। এবং তাপশক্তি পরিবহণ দ্বারা সবসময় উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুতে প্রবাহিত হয়। উষ্ণতা কোন বস্তুর মোট তাপের পরিমাপ নয়, তাপের "মাত্রা"র পরমাপ। এই মাত্রা বস্তুর কোন অংশের স্থানীয় তাপজনিত আণবিক চাঞ্চল্যের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।পরম তাপমাত্রা এমন একটি উষ্ণতা সূচক যা বস্তুর তাপজনিত গতিশক্তির একটি পরিচায়ক।
কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা নির্ধারণ করে ঐ বস্তুটি অন্য কোন বস্তুর সংস্পর্শে আসলে তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে, তাকে তার তাপমাত্রা বলে। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক হল ক্যালভিন(K)। ক্যালভিন এককের পূর্বে ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একক হিসেবে প্রচলিত ছিল।
No comments:
Post a Comment
পোস্ট সম্পর্কে মতামত দিন